মঙ্গলবার, ০৯ জুলাই ২০২৪, ০৫:১৯ পূর্বাহ্ন
Title :
সরকারি চাকরিতে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) কর্মকর্তাসহ অন্তত ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। কুলিয়ারচরে বৃক্ষ রোপন কর্মসূচীর উদ্ভোধন সুন্দরবনের মধু ভারতের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পর বাংলাদেশে এ নিয়ে শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে। খুলনা জেলা পরিষদে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে যমুনা টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি রাশেদ নিজাম লাঞ্ছিত। আশ্রয়ন প্রকল্পের (গুচ্ছ গ্রামের) ঘরের নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার আগেই ঘুষ নেয়ার অভিযোগ সংবাদ সম্মেলন শেষে হঠাৎ চারজন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীকে ডেকে নিয়ে বৈঠক করেছেন মগরাহাট পশ্চিম এরিয়া কমিটির উদ্যোগে জোতি স্বরণে রক্তদান কর্মসূচি। নতুন অর্থবছরে দেশের সার্বিক অর্থনীতিকে প্রধান চারটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সামনে এগোতে হবে। সম্প্রতি ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ট্রানজিট চুক্তি হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর পৌরসভায় বেলি ব্রিজের পাশে রাসেলস ভাইপার সাপ মারা হয়েছে আতঙ্কে এলাকাবাসী

রহনপুরে আমবাজার জমজমাট 

জাকির হোসেন সনি, গোমস্তাপুর প্রতিনিধিঃ
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ১৩ জুন, ২০২৪
  • ২৯ Time View

ফলের রাজা বলা হয় না আম কে। কিন্তু আম এমনই একটি ফল যে এই ফল খাওয়ার জন্য মানুষ উদগ্রীব হয়ে থাকে। যে এলাকায়  আম উৎপাদন হয় সেখানেও  জনপ্রিয়  এই ফল।আম উৎপাদন ও বিপণনে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থান  রহনপুর।
আম ফল এমনই লোভনীয়  আর আকর্ষণীয় কথায় আছে তদবির  করেও যে কাজ না হয় শুধু আম পেলেই মন গলে যায় ।আর হয়ে যায় কাজ। এরকম অনেক নজীর  আছে আমফল দিয়েই বড় বড় কাজ হাতিয়ে  নিয়েছে অনেকে। আর তাইতো দেশের রাজনীতিবিদ, আমলা,ব্যবসায়ী সহ সকল পেশার মানুষের  কাছে আমের কদর বেশী। আম সিজন আসলেই চাঁপাইনবাবগন্জের মানুষের কাছে ফোন চলে আসে, ভাই আম খাওয়াবেন না। এভাবেই সবার প্রিয় খাবারে পরিণত হয়েছে  আম ফল।দেশের বিভিন্ন স্হানে বর্তমান সময়ে আম উৎপাদন  হলেও দীর্ঘ সময় ধরে চাঁপাইনবাবগন্জ জেলা আম উৎপাদনে  শীর্ষ স্হানে রয়েছে। চাঁপাইনবাবগন্জের রহনপুরে নানান পদের বাহারী  নামের আম পাওয়া যায়। কৃত্রিমতার এই সময়েও এখনও কেমিক্যাল  মুক্ত আম ফল মিলে এই জেলায়।  

মূলতঃ মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু  হয় আমের বাজারজাত  করার  প্রক্রিয়া।তবে নিয়মকানুন মেনে  পুরোপুরি  বাজারে আসে জুন মাসের ১ম থেকে।লক্ষনভোগ, বিভিন্ন  জাতের গুঠি, কালিভোগ, গোপালভোগ  দিয়ে শুরু হয়ে খিরসাপাত( হিমসাগর),  ল্যাংড়া, ফজলী, আমরুপালী, সুরমা ফজলি, বারী ফোর, কাটিমন,  আশ্বিনা সহ নানান জাতের  আম ফল   বাজারে পাওয়া যায়  একেবারে আগষ্টের  শেষ অবধি।  এর মধ্যে কয়েক জাত যেমন কাটিমন, বারী ১১, বারী ৪ ইত্যাদি  আম প্রায় সারা  বছর পাওয়া যায়। 
তবে আবহাওয়ার  বিরুপ প্রতিক্রিয়ায় এইবার আম উৎপাদন  কম। ফলে দামও তুলনামূলক  ভাবে  বেশী। গোপালভোগ  শেষের দিকে।  এখন বাজারে হিমসাগর, ল্যাংড়া সহ অন্যান্য আম।  গোপালভোগ এর দাম গিয়ে ঠেকেছে ৪৫০০/ টাকা মন।  শুরুটা ছিল২২০০/২৩০০ দিয়ে। হিমসাগর, ল্যাংড়া মিলছে  ২৫০০  থেকে সর্বোচ্চ ৪০০০ টাকা মন। বিভিন্ন জাতের  গুঠি পাওয়া যাচ্ছে  ১২০০ থেকে ২০০০ এর মধ্যে।  কালিভোগ বিক্রয় হচ্ছে ১৫০০ থেকে ২২০০ টাকার মধ্যে।  লক্ষ্মণভোগ ১১০০/ থেকে শুরু হয়ে ১৬০০/ টাকা গিয়ে ঠেকেছে। আমরুপালীআম  ২২০০/ টাকা থেকে ৩৫০০/ টাকা মন বিক্রি  হচ্ছে। এ ছাড়া আরো বিভিন্ন জাতের আম মোটামুটি দামে পাওয়া যাচ্ছে।

আম আড়তদার  মোঃ আবুল কাশেম  বলেন,  আম উৎপাদন  কম হওয়ায় আমের দাম বৃদ্ধি  পেয়েছে।  তবুও দেশের বিভিন্ন স্হান থেকে আম ব্যবসায়ী,  স্হানীয়  ভাষায়  যাদের আম বেপারী বলে তারা  এসে রহনপুরে  আস্তানা গেড়েছেন।প্রতিদিন  আম ক্রয় করে পাঠাচ্ছেন  নিজ নিজ এলাকায়।আম উৎপাদন কম হলেও দাম বেশি হওয়ায় এবার আম ব্যবসায়ীরা লাভের আশা করছে। আমার এখান থেকে প্রতিদিন দুই থেকে তিনটি ট্রাক দেশের বিভিন্ন স্থানে আম নিয়ে যায়। 
খুচরা  আম ব্যবসায়ী কমল বলেন, আমের ব্যবসা ভালোই চলছে। যে সকল ক্রেতা ১০ কেজি, ২০ কেজি করে আম বিভিন্নজনকে উপহার দেওয়ার জন্য ক্রয় করেন তাদের জন্য আমরা অর্থাৎ খুচরা ব্যবসায়ীরা রয়েছি। আমরা যত্ন করে আমের ক্রেতাকে আম প্যাকেটজাত করে নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে দি। 
আমের সিজন আসলেই এলাকার ছাত্র, যুবক, তরুণেরা ঝুকে পড়ে অনলাইনে আম বেচাকেনায়।
যারা অনলাইনে আম ক্রয় করতে চান তারা অনলাইনে আম বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে নির্দিষ্ট অংকের টাকা পাঠিয়ে দেন। অতঃপর অনলাইন আম ব্যবসায়ীরা গ্রাহকের জন্য নির্দিষ্ট আম প্যাকেটজাত করে  নিজ উদ্যোগে কুরিয়ার করে দেন। এবার প্রায় ৬০ জন অনলাইনে  আম বিক্রয় করার জন্য নির্দিষ্ট পেজ খুলেছেন। একেক জন একেক নাম দিয়ে পেজ খুলে গ্রাহকের সাথে কথা বলে নিচ্ছেন এবং তাদের প্রয়োজনীয় আম তাদের নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছে দিচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে কথা হয় চাঁপাই পিউর ম্যাঙ্গোর  স্বত্বাধিকারী ওবায়দুল্লাহ দুলালের সাথে। তিনি বলেন, আমের উৎপাদন  কম হওয়ায় গতবারের চেয়ে এবার অনেক কম আম বিক্রয় হচ্ছে। তবে দাম বেশি হওয়ায় গতবারের চেয়ে কিছু কম হলেও লাভ হবে।  অনলাইনের চাপাই  ম্যাংগো  ভিলার  নাজমুল হক জানান, আমের ব্যবসা মোটামুটি হচ্ছে।তবে দাম সহনীয় পর্যায়ে  হলে আরো বেশী করে  বিক্রয়  করতে পারতাম। আমরা দুতিন বন্ধু মিলে আমের ব্যবসা করছি।

আমের বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা হয় গোমস্তাপুর  উপজেলা আম চাষী ও আম ব্যবসায়ী সমিতির  সাধারণ সম্পাদক  মোঃ আবু তালেব এর সাথে।তিনি বলেন, প্রকৃতির  বিরুপ আবহাওয়ার  ফলে আমের উৎপাদন কম। তবে গত দু-তিন বছর আমের উৎপাদন ভালো হয়েছিল কিন্তু আমের দাম না থাকায় আম চাষি ও আম ব্যবসায়ীরা ঠিকমতো লাভের মুখ দেখতে পায়নি। কিন্তু এবার আমের দাম ভালো থাকায় আম চাষি ও ব্যবসায়ীরা লাভের আশা করছে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, আমের শেষ পর্যন্ত আম চাষি ও ব্যবসায়ীরা তাদের কষ্টের ফল বাসায় নিয়ে যেতে পারবে। 
রহনপুর আম আড়তদার সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন বলেন, রহনপুরের প্রায় শতাধিক  আম আড়তদার এখন আম ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। প্রতিদিন তারা রহনপুরের আম বাজার থেকে  আম  ক্রয় করে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠাচ্ছেন। প্রতিদিন প্রায় শতাধিক ট্রাক আম পরিবহন করে দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে। 
আমের সিজন আসলেই  কুরিয়ার ব্যবসা জমজমাট  হয়ে উঠে।  আম বাজারে প্রায় ১০ টি এবং রহনপুর সহ উপজেলার  বিভিন্ন  স্হানে  আরও ৫/৬ টি কুরিয়ার  সার্ভিস আম পাঠানোর  কাজে ব্যস্ত। ঢাকায়  আম পাঠাতে কেজি প্রতি ১২  টাকা ও ঢাকার বাইরে কেজি প্রতি ১৫ টাকা করে নিচ্ছে  কুরিয়ার  সার্ভিস গুলো। জননী কুরিয়ার  সার্ভিসের  স্হানীয় এজেন্ট  সুমন বলেন, আম কম হওয়ায় গতবারের চেয়ে প্রায় ৪০% আম কম যাচ্ছে। কুরিয়ার খরচ  ও বাড়েনি তাই লভ্যাংশ কম।
আম পরিবহনের   জন্য গত ১০ জুন থেকে চালু হয়েছে রহনপুর থেকে চাঁপাইনবাবগন্জ,রাজশাহী  হয়ে ঢাকা গামী ম্যাংগো ট্রেন।আম পরিবহনে কেজিতে ২ টাকার কম লাগলেও আমব্যবসায়ীরা ট্রেন এ  আম পাঠাতে আগ্রহী নন। প্রথম দিনে প্রায় ১০০০ কেজি আম গেলেও দ্বিতীয়  দিনে কমে যায়। এই ট্রেনে   বুধবার   চাপাইনবাবগন্জ  থেকে  গরু যাবে  বলে জানা গেছে।  এ প্রসঙ্গে  কথা হয় রহনপুর স্টেশন  মাস্টার শহীদুল ইসলাম এর  সাথে।  তিনি আক্ষেপ  করে বলেন,  এত কম টাকায় আম পরিবহনের  সুযোগ থাকার পরেও কেন যে আম যাচ্ছে না  এটা বুঝতে পারছি না। তবে তিনি বলেন ভোর ৬ টায় রহনপুর থেকে  খুলনা  গামী ট্রেন  মহানন্দা এক্সপ্রেস এ  ( বেসরকারি  মালিকানায় চলে) প্রায় ৬০০/৭০০ ক্যারেট অর্থাৎ  ১২০০০/১৪০০০ কেজি আম পরিবহন হচ্ছে। 
উপজেলা  কৃষি কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ সরকার  বলেন, এবার উপজেলায় ৪ হাজার ২’শ ৩০ হেক্টর জমিতে আম উৎপাদন হচ্ছে। এবছর প্রায় ৮৫% আমের মুকুল হয়েছে।এবছর শীতের প্রকোপ দীর্ঘস্থায়ী হওয়া ও কুয়াশাচ্ছন্নের কারণে মুকুল কম এসেছে।আমরা কৃষি বিভাগ  থেকে প্রতি বছরের ন্যায় আমের ভালো ফলনের জন্য  সার্বিক পরামর্শ ও সহযোগিতা করার জন্য আম চাষীদের সাথে কথা বলেছি এবং পরামর্শ দিয়েছি।গত বছরের ন্যায় রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্পের আওতায় এবার গোমস্তাপুর উপজেলার ৩৯ জন আম চাষির আম রপ্তানিযোগ্য করার লক্ষ্যে উপকরণ সহায়তাসহ সার্বিক সহযোগিতা করা হয়েছে। আশা করছি এবার গোমস্তাপুর উপজেলা হতে  আম রপ্তানি বেশি হবে।
এলাকার সচেতন মহল আশা করেন, দেশের দ্বিতীয়  বৃহত্তর আম বাজার রহনপুরে পিউর আম পাওয়া যায়।তাই আম ফল খেতে আগ্রহীদের দেশের বিভিন্ন স্হান থেকে রহনপুরে এসে কেমিক্যাল মুক্ত  আম খাওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © মর্নিং বিডি ডট নিউজ
Developed by: A TO Z IT HOST
Tuhin